ব্রেকিং নিউজ :

সম্প্রীতির বন্ধনে সাড়ে চার যুগ ধরে চলছে দুর্গোৎসব ১৫টি মসজিদ-মন্দিরের পাশাপাশি অবস্থান


প্রকাশের সময় : অক্টোবর ১, ২০২৫, ৬:০২ অপরাহ্ন | ২৫
সম্প্রীতির বন্ধনে সাড়ে চার যুগ ধরে চলছে দুর্গোৎসব ১৫টি মসজিদ-মন্দিরের পাশাপাশি অবস্থান

নড়াইল  প্রতিনিধি:

হিন্দু অধ্যুষিত নড়াইলে দুর্গাপূজা উৎসবমুখর পরিবেশে অনুষ্ঠিত হচ্ছে। সাম্প্রদায়িক-সম্প্রীতির অনন্য নজির নড়াইলে মসজিদের গা ঘেষে অন্তত ১৫টি মন্দির রয়েছে। তবে, নেই কোনো বিদ্বেষ। জাকজমকপূর্ণ পরিবেশে দুর্গোৎসবের আনুষ্ঠানিকতা চলছে। দুই ধর্মের মানুষের মাঝে সম্প্রীতির বন্ধন অটুট রয়েছে। এ বছর নড়াইলে ৫২৪টি মন্ডপে শারদীয় দুর্গাপূজা অনুষ্ঠিত হচ্ছে।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, নড়াইল শহরের চিত্রা নদীর কুল ঘেষে মহিষখোলা এলাকায় মসজিদ ও মন্দিরের অবস্থান। ১৯৮১ সালে এই দু’টি ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানের কার্যক্রম শুরু হয়। সেই থেকে সম্প্রীতির বন্ধন অটুট রেখে প্রায় সাড়ে চার যুগ ধরে একই আঙিনায় চলছে দুর্গোৎসব। পাশাপাশি মসজিদে নিয়মিত আজান ও নামাজ আদায় হচ্ছে। এছাড়া চিত্রা নদীর একই ঘাট থেকে পানি দিয়ে হিন্দু-মুসলিম তাদের আচার অনুষ্ঠান কাজ সম্পন্ন করছেন।

এ ব্যাপারে মহিষখোলা সার্বজনীন মন্দিরের সিনিয়র সভাপতি নিপ্রেন্দ্রনাথ মজুমদার বলেন, ১৯৮১ সালে থেকে আমাদের মন্দির এবং মসজিদ একেবারে কাছাকাছি। নামাজের সময় আমাদের আচার অনুষ্ঠান বন্ধ রাখি। দীর্ঘ সাড়ে চার যুগ ধরে আমাদের কোনো সমস্যা হয়নি। মহিষখোলার পুরাতন রেজিস্ট্রি অফিস জামে মসজিদের ইমাম হাফেজ এনামুল হক বলেন, আমি এই মসজিদে দীর্ঘ ১২ বছর যাবত ইমাম ও খতিব। পাশের মন্দিরে দুর্গোৎসবসহ পূজা-অর্চনা হয়ে আসছে। আমরা মসজিদে নামাজ আদায়সহ ওয়াজ মাহফিল করে থাকি। এ পর্যন্ত কারোর মাঝে কোনো সমস্যা হয়নি। ভবিষ্যতেও সমস্যা হবে না ইনশাল্লাহ।  

এদিকে, এই চিত্র শুধু নড়াইল শহরের মহিষখোলা এলাকারই নয়। মহিষখোলা মতো নড়াইলের বিভিন্ন এলাকায় সাম্প্রদায়িক-সম্প্রীতির অনন্য নজির রেখে মসজিদের গা ঘেষে অন্তত ১৫টি স্থানে মন্দির রয়েছে। যেখানে অনুষ্ঠিত হচ্ছে শারদীয় দুর্গোৎসব। এখানে যুগ যুগ ধরে দুই ধর্মের সম্প্রীতির বন্ধন অটুট রয়েছে। তবুও প্রতিবেশি দেশসহ বিভিন্ন দেশ থেকে অনেক সময় হিন্দু-মুসলমানের ধর্মীয় আচার অনুষ্ঠান নিয়ে বিভ্রান্তিমূলক খবর অপপ্রচার করা হয়। যা আদৌ সত্য নয়, বলে মন্তব্য করেছেন বাংলাদেশ পূজা উদযাপন ফ্রন্ট নড়াইল জেলা শাখার সভাপতি অশোক কুন্ডু।

তিনি বলেন, নড়াইল সাম্প্রদায়িক-সম্প্রীতির উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত। এখানে হিন্দু-মুসলিম কোনো সমস্যা নেই। যে যার ধর্ম সুষ্ঠু-সুন্দর ভাবে পালন করেন।

এ ব্যাপারে জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক মনিরুল ইসলাম বলেন, শুধু দুর্গোৎসবের সময়ই নয়, নড়াইলে সবসময় সব ধর্মের মানুষের মাঝে ঐক্যের বন্ধন রয়েছে। আমাদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের নেতৃত্বে দুর্গোৎসব রঙিন করতে আমরা মাঠে আছি।

জেলা জামায়াতে ইসলামীর আমির আতাউর রহমান বাচচু বলেন, নড়াইলে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির মধ্য দিয়ে যার যার ধর্ম তিনি পালন করেন। দুর্গোৎসব সুষ্ঠু-সুন্দর পরিবেশে অনুষ্ঠানের লক্ষ্যে জেলা জামায়াতে ইসলামী কাজ করে যাচ্ছে। মহিষখোলাসহ নড়াইল শহরের অভ্যন্তরে অন্ততপক্ষে পাঁচটি এবং লোহাগড়া ও কালিয়া উপজেলার অনেক এলাকায় মসজিদ-মন্দির একেবারে কাছাকাছি রয়েছে। তবুও কখনো কোনো সমস্যা হয়নি।

এদিকে পুলিশ সুপার রবিউল ইসলাম বলেন, দুর্গাপূজা সুষ্ঠু-সুন্দর ভাবে অনুষ্ঠানের লক্ষ্যে নড়াইলে চার স্তরের নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। এছাড়া প্রশাসন, রাজনৈতিক এবং পূজা উদযাপন পরিষদ ও পূজা উদযাপন ফ্রন্টের নেতৃবৃন্দের সমন্বয়ে সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। আশা করছি সুষ্ঠু-সুন্দর পরিবেশে দুর্গোৎসব শেষ হবে।